শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪
Online Edition

ক্ষমতাসীনরা সাজানো বাহিনী দিয়েই নির্বাচন করতে চায়

গতকাল শুক্রবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : দেশে আইন-শৃঙ্খলা বলতে এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া ১১টায় দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আজ শুধু নারী সমাজ নয় অবৈধ সরকারের দুঃশাসনে সারা দেশের মানুষ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছে। কোথাও কারো কোন নিরাপত্তা নেই, দেশে আই-শৃঙ্খলা বলতে এখন কিছুই অবশিষ্ট নেই। সারা দেশটাই যেন এখন বধ্যভূমি আর অবরুদ্ধ কারাগারে পরিণত হযেছে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা ওবায়দুল কাদের নাকচ করে দেওয়ায় আ’লীগ সাধারণ সম্পাদকের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীনদের বক্তব্যেই প্রমাণিত হচ্ছে, মনোনীত ও সাজানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েই তারা নির্বাচন করবে। 

সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজীজুল বারী হেলাল, সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াস উদ্দিন মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।

রিজভী বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শিশু-কিশোর ধর্ষণ ও নারীদের হামলার ঘটনা যে হারে বেড়েছে তা রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে এখন সারা দেশের অভিভাবকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্কুল ছাত্রী কণিকা ঘোষ, রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা প্রাণ হারিয়েছে বখাটেদের হামলায়। প্রাণ দিতে হয়েছে মাদারীপুরের নিতু মন্ডলকে। সিলেটের কলেজ ছাত্রী খাদিজা ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের নৃশংস হামলার শিকার হয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, এসব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে আবার মিরপুরে দুই জমজ বোন কলেজ ছাত্রীকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে শাসকদলের অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে নিজের ঘরে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের কোপে আহত দশম শ্রেণির এক ছাত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

 ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঝিনাইদহে এক স্কুল ছাত্রীকে ছুরিকাঘাত করেছে আর এক সন্ত্রাসী। প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় গাজীপুরে ঘরে ঢুকে এক ছাত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে এক সন্ত্রাসী। রাজধানীর দক্ষিণখানে গত রোববার বাসায় ঢুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে স্বজনদের সামনেই এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে স্থানীয় এক সন্ত্রাসী।

রিজভী বলেন, গত সোমবার ঢাকার লালবাগে বাসায় ঢুকে এক নারীকে ধর্ষণ করেছে তিন সন্ত্রাসী। একই দিনে ধামরাইয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে এক আওয়ামী লীগ নেতা। দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ৫ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করেছে এক পাষ-। ধর্ষিতা শিশু এখন ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যুর মুখোমুখি। এমনই পৈশাচিক ও লোমহর্ষক ঘটনা ঘটছে অহরহ। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে শিশু ও নির্যাতনের ঘটনা। সবখানেই ঘটছে এ ধরনের ঘটনা। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীও একজন নারী। তিনি কারণে অকারণে অকাতরে কথার ধারাবর্ষণ করে যান। বিশেষভাবে নিজ দেশের বিরোধী দলগুলোকে কষে গালমন্দ করতে সারা দুনিয়ায় তার জুড়ি মেলা ভার। দেশে এতসব ঘটনা ও পদে পদে নারী লাঞ্ছনা, ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা ও শাসকদলের অঙ্গ সংগঠনগুলোর পৈশাচিকতায় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চুপ কেন? তিনি বিএনপির পক্ষ থেকে নারী সমাজসহ সকল স্তরের মানুষকে সকল পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

নির্বাচন ও সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে রিজভী বলেন, গোটা জাতি একজন নতুন নেতৃত্ব, নতুন সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে উদ্দীপনার কথা, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার কথা শুনতে চেয়েছিল। কিন্তু গোটা জাতি একটি তিমিরাচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যে পড়েছে তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে- সেই পুরনো পথেই তারা হাঁটবেন। ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, গত ২২ ও ২৩ অক্টোবরের সম্মেলনে আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংবিধানে যেভাবে বলা আছে, সেভাবেই একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে।

তার এ বক্তব্যের সমালোচনায় রিজভী বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা, এখানে জনগণের অংশগ্রহণে নির্বাচন হওয়া এবং মানুষের যে ভোটাধিকার প্রয়োগ, এ ব্যাপারে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের যে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি- সেটি আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদকের মুখ থেকে বেরোয়নি, এটাই হচ্ছে চরম হতাশার।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা কাদের নাকচ করে দেওয়ায় তার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, অর্থাৎ তাদের (সরকার) মনোনীত, তাদের সাজানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়েই তারা নির্বাচন করবেন। সেই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না, সেই বিষয় নিয়ে কোনো সংলাপ হবে না। আগামী নির্বাচন নিয়ে জনগণ ‘এমন আশঙ্কাই করছে’ বলে মন্তব্য বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবের।

তিনি বলেন, আমরা তো আগে থেকেই জানি- আপনারা সংলাপে কেন বসতে চান না। কারণ ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক দল যখন জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকে, তখন সারা দেশের জনগণকে তারা নির্বাক ও মূক করে ফেলে। সুতরাং সংলাপ, কথা বলা, আলোচনা- এসব মানবিক প্রক্রিয়ায় ফ্যাসিবাদী সংগঠন গুরুত্ব দেবে না। রিজভীর বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি নির্বাচন করতে চায়, যেখানে ফলাফল হবে তাদের পছন্দ মত।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ